রোববার (৯ জুন) সকাল আটটা থেকে শুরু হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া তৃতীয় ধাপের জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনকে ঘিরে গৌরনদী পৌর শহর থেকে শুরু করে সাতটি ইউনিয়ন এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের ভোটারদের মধ্যে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে।
বিশেষ করে ভোটগ্রহণের দিন কি ঘটবে আর বিজয়ের মধ্য দিয়ে কারা বসবেন দুই উপজেলা পরিষদের দায়িত্বে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
কারণ হিসেবে স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দারা বলছেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই স্থানীয় সাংসদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে খ্যাত দুই উপজেলার দুইজন প্রার্থী রয়েছে। আর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা এবং হুমকির ঘটনায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কি নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ করা হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন অনেক প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। আর সেই দুশ্চিন্তা থেকে ইতোমধ্যে অধিক সংখ্যক ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ, কেন্দ্র দখল এবং দেশত্যাগের হুমকির অভিযোগ এনে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে দুই গ্রুপের বিভক্ত হয়ে চরম বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (৭ জুন) দিবাগত রাতে গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে পোস্টার লাগাতে প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীকী সমর্থকরা বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাপ-পিরিচের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন মিয়া।
এর আগে ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রি।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে তারা বদ্ধপরিকর। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বরিশাল জেলার সবগুলো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে। এখন যে দুটি উপজেলায় নির্বাচন রয়েছে সে দুটিও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উৎসবমুখর পরিবেশেই হবে।
জানা গেছে, গৌরনদীতে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং আগৈলঝাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
আগৈলঝাড়ার ৬০টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৩জন এবং গৌরনদীতে ৬৯টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে রোববারের ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে শনিবার সকালে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নির্বাচন উপলক্ষ্যে স্থানীয় অডিটোরিয়ামে ব্রিফিং প্যারেডে অনুষ্ঠিত হয়। শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সরঞ্জামাদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রোববার ভোরে স্ব-স্ব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হবে।