TT Ads
Spread the love

শাহিন সুমন :
মজিবর রহমান সরওয়ার বরিশালে রাজনৈতিক পরিচয় যেমন পেয়েছেন সংসদ সদস্য, হুইপ, সিটি কর্পোরেশন মেয়র ও বিএনপি উচ্চপদস্থ নেতা হিসেবে। কিন্তু তার সেই পরিচয়ের পাশে ছিলো বরিশালের উন্নয়নের জন্য স্থানীয়ভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার। মামুলি ঘোষণার মধ্যেই নয়, বরং বাস্তবচেষ্টায় কিছু উদ্যোগ তার নামের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

গত দশকে এবং তার আগে পরে সময়ে কিছু উন্নয়নমূলক দাবি, পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গা তিনি পেশ করেছেন এবং অংশবিশেষ বাস্তবায়নেও বলেছিলেন। সে কাজগুলো বিশেষত অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন, শিক্ষাসহ সামাজিক কাজ যদিও পুরো ছবি তৈরি করতে পারেনি, তথাপি বরিশালের বদলে যাওয়া চিত্রে তার অবস্থান স্বীকৃত।

রাস্তাঘাট, সড়ক ও নগর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন। বরিশালে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও যোগাযোগ সমস্যার কারণে যানজট, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থা চলছিল। সরোয়ার মেয়র থাকাকালীন নগরীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর সংস্কার ও নতুন রাস্তাপথ, ড্রেনেজ ও কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

পাশাপাশি, বড় সড়ক (হাইওয়ে/ন্যাশনাল রোড) উন্নয়নের দাবি তার নেতৃত্বে বারবার উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক মানববন্ধন আয়োজনেও অংশ নেন, যেখানে ৬-লেইনের জন্য বরিশাল–ফরিদপুর ও বরিশাল–কুয়াকাটা জাতীয় সড়ক উন্নয়নের পুনরায় দাবি করা হয়।

এই ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা, যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হত, নগরবাসীর জন্য দৈনন্দিন যাতায়াতকে সহজ ও সুষ্ঠু করত।

সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসেবে সরোয়ার তার দায়িত্বের আওতায় ড্রেনেজ উন্নয়ন, খাল খনন ও নর্দমা নির্মাণ বরিশালে বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা ও বৃষ্টির জলাবৃষ্টির সংকট কমানোর চেষ্টা ছিল অপরিসীম।

শহরের পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট, শহর লাইটিং ও নগর সৌন্দর্য এসব দিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল। এমনকি, নগর ব্যাবস্থাপনায় একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পক্ষে ছিলেন মজিবর রহমান সরওয়ার, যাতে বরিশালকে একটি আধুনিক, পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

যদিও সব পরিকল্পনা বহুলাংশে বাস্তবায়ন হয়নি, তার নকশা ও পরিকল্পনাগত অবস্থান দেখিয়েছিলেন বরিশালকে “নগর উন্নয়ন” পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা।

সামাজিক দায়বদ্ধতায় মানুষের জন্য কাজ এবং দৃষ্টান্ত মাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় সরোয়ার মাঝে মাঝে সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন।

উন্নয়ন দাবির মধ্য দিয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক সরোয়ার শুধু প্রশাসনিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি বরিশালের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি দাবিও তুলেছেন সড়ক, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও ন্যায্য বরাদ্দ।

এ বছরই এক মানববন্ধনে জোরালো দাবি ছিল বরিশাল বিভাগের জন্য জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি, সড়ক ও স্বাস্থ্য খাত বাস্তবায়ন।

এর মাধ্যমে তিনি উপদেষ্টা ও সরকারের নজর আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন, যাতে বরিশালের অবহেলিত অংশগুলো উন্নয়নের দৃষ্টিতে আসতে পারে।

মজিবর রহমান সরওয়ার সংসদ সদস্য থাকাকালিন সময় কিন্তু, সব পরিকল্পনা বা প্রতিশ্রুতি সফল হয়নি। বিভিন্ন কারণ অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক প্ল্যান ও বাস্তবতার মধ্যে সময়মতো কাজ শেষ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এমনকি, তার সংসদ সদস্য হিসেবে কর্মকালে তার কিছু সময় পরে বিতর্ক ও নির্দেশনা-পরিবর্তনও হয়েছে।

অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, বজেট অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক মেরুপরিবর্তন ঘাটতির কারণে। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে অনেক প্রকল্প বাতিল করা হয়। প্রকল্পের ধারাবাহিক কাজ না হওয়ার ফলে অনেক সুযোগই আদৌ কাজে রূপ পায়নি।

তবে, পুরোপুরি সফল না হলেও তার দৃষ্টিভঙ্গা, পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার বরিশালের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে মজিবর রহমান সরওয়ার।

অনেকেই ধারনা করছেন বর্তমানে সময় হয়েছে পুরনো পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করে, নতুন সুযোগ ও চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ফের বাস্তবায়ন করার।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এটাই হবে তার প্রধান কর্মগুলোর অংশ।

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *