নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বরিশাল নগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা। সুষ্ঠু তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ অবৈধ যানের সংখ্যা একের পর এক বেড়েই চলছে। সেই সাথে বাড়ছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা এবং বিদ্যুৎ অপচয়ের পরিমাণ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল সিটি এলাকায় চলাচল করছে ১৫ হাজারের অধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা। সেই চলাচল করছে আরও ৫ হাজারের অধিক থ্রি-হুইলার।
যদিও অবৈধ ইজিবাইকের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে।
এমনকি অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও তেমন দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে। বরং নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব একদপ্তর চাপানোর চেষ্টা করছে অন্য দপ্তরের ওপর।
তবে বিআরটিএ বলছে, ‘আয়োতনের তুলনায় নগরীতে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইক এবং ব্যাটারির রিকশার সংখ্যাই বেশি। এসব অবৈধ ইজিবাইক বা ব্যাটারির রিকশা বন্ধে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর রূপাতলী বাস্ট্যান্ড থেকে লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদবাদ থেকে রূপাতলী এবং লঞ্চঘাট, জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ ও বেলতলা, লঞ্চঘাট থেকে বেলতলা, চৌমাথা থেকে নবগ্রাম, বটতলা এবং শেবাচিম হাসপাতাল রুটে চলাচল করছে অসংখ্য ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এবং রিকশা। এর বাইরে নগরীর অভ্যন্তরীণ রুটেও চলাচল করছে এসব অবৈধ যান।
সরেজমিনে নগরীর হাসপাতাল রোড এবং বান্দ রোডের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দেখা যায়, প্রতি মিনিটে ২০-২৫টির অধিক ইজিবাইক এবং থ্রি-হুইলার বা সিএনজি চলাচল করছে। এর ফলে প্রতিটি সড়কেই লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজট।
আবার নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্যেও নগরীর সীমান্তবর্তী গড়িয়ারপার থেকে নলছিটি জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে ইজিবাইক এবং থ্রি-হুইলার। ফলে প্রায়শই আসছে দুর্ঘটনার হতাহতের খবর। তাছাড়া এসব যানের ভাড়াও নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে দাবি যাত্রীদের। যাত্রীদের জিম্মি করে যে যার মতো করে আদায় করছে ভাড়া। এখন বৈধ বা অবৈধ, যেকোন যানে উঠলেই ১০ টাকার নিচে ভাড়া নেই।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের হাতে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা এ বিষয়ে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আবার বাম রাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনের চাপে অবৈধ ইজিবাইক এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইজিবাইক চালক এবং মালিকরা। একেরপর এক সড়কে নামছে অনুমোদনহীন ইজিবাইক এবং রিকশা।
এমনকি সিটির বাইরে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার ইজিবাইক, ব্যাটারির রিকশা এবং থ্রি-হুইলার এসে চলাচল করছে নগরীতে। ফলে দিন অথবা রাত, সব সময় যানজট লেগে থাকছে সদর রোড, নথুল্লাবাদ, নতুন বাজার, রূপাতলী, সাগরদী, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, বটতলা চৌমাথা এবং লঞ্চঘাট সড়কে।
অপরদিকে, শহরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে চলাচালকারী ইজিবাইক এবং রিকশা থেকে অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। যাদের ছত্রছায়ায় ওইসব রুটে চলাচল করছে অবৈধ ইজিবাইক।
ইজিবাইক প্রসঙ্গে বিআরটিএ বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ। অবৈধ এ যানের সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে শহরের ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি হয়ে গেছে। এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।
নগরীতে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বরিশাল সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে আমরা অবৈধ যানের বিকল্প হিসেবে বৈধ যানের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এতে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা কমে যাবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুনা লায়লা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সিটি করপোরেশনের সাথে বসেছিলাম। অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেয়ার কথা। উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা প্রশ্নটি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘অবৈধ ইজিবাইক এবং রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনের বক্তব্য জানতে অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি ফোন রিসিভ করেননি জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমের। তবে সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার পরিদর্শক আতিকুর রহমান মানিক বলেন, ‘নগরীতে কী সংখ্যক ইজিবাইক বা ব্যাটারির রিকশা চলছে সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই। এটা ট্রাফিক বিভাগের কাছে থাকবে। তবে দুই হাজার ৬১০টি হলুদ ইজিবাকের ব্লু-বুক এবং টোকেন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এর বাইরে চলাচলকারী সব ইজিবাইক অবৈধ।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ এসব ইজিবাইক বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত মাসে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা বলা সম্ভব না।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘একটি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও রিকশায় পাঁচটি করে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। ১২ ভোল্টের পাঁচ ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ২ কিলোওয়াট। দিনে পাঁচটি ব্যাটারির একটি ইজিবাইক আট ঘণ্টা চার্জ দিলে খরচ হয় ১৪-১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে বরিশাল নগরীতে বর্তমানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে ইজিবাইক চার্জে। তাই এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি এখন সচেতন মহলের।