নিজস্ব প্রতিবেদক :
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আতঙ্ক নদীভাঙন আবারও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মেঘনার চরাঞ্চলে নতুন করে বালুমহাল ইজারা দেওয়ায় তিন ইউনিয়নের মানুষ ও অবকাঠামো চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। সরকারি বরাদ্দে নির্মিত প্রায় ৪২৪ কোটি টাকার রক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে।
নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ হলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে হিজলার গৌরবদী ইউনিয়ন এবং মেহেন্দীগঞ্জের গবিন্দপুর ও উলানিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে থাকায় আগামী বর্ষা মৌসুমেই এসব এলাকার বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
বেআইনিভাবে ইজারার অভিযোগ
বরিশালের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিভাগের সাবেক কমিশনার মো. রায়হান কাওছারের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৭টি বালুমহাল ঘোষণা ও ইজারার অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও লিখিত অভিযোগের পরও ইজারা বাতিল হয়নি। অভিযোগ রয়েছে ইজারাকৃত এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের অঞ্চল থেকেও ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ
স্থানীয় সমাজসেবক সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী, যিনি রিটকারী বলেন “হাইকোর্টে রিট থাকা অবস্থায় বালুমহাল ইজারা দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল। প্রশাসনের দায়িত্ব জনগণকে রক্ষা করা, কিন্তু এখানে উল্টোটা হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ বদলে বিপর্যয় নেমে আসছে।
জরিপ ছাড়াই ইজারা
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১, এছাড়া বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর বিধিমালা অনুযায়ী-অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ জরিপ করে নিশ্চিত করার পরই জেলা প্রশাসক প্রতিবেদন জমা দেবেন বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব বিবেচনাপূর্বক বিভাগীয় কমিশনার বালুমহাল ঘোষণা করতে পারেন।
বরিশাল জেলায় ১৪৩২ বাংলা সনের মোট ৮টি এলাকায় বালুমল হিসেবে ইজারা দেন জেলা প্রশাসক। সূত্র অনুযায়ী দেখা যায়-২০২৩ সালে একটি মাত্র এলাকার জরিপ করা হয়েছে। বাকি ৭টি এলাকা এখনো জরিপ করা হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএ হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশও মানা হয়নি
গত ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট সৈয়দখালী সাওড়া মৌজার বালুমহাল ইজারা স্থগিত করে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেয়। রুল পাঠানো হয় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে এখনো বালু উত্তোলন অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালুমহাল ইজারা দিয়েছেন সাবেক বরিশাল জেলা প্রশাসক এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার।
বরিশালের মেঘনা নদীর ৩৫ নং সৈয়দ খালী সাওড়া মৌজার ৩৮-৭৮-৩৮৮১ দাগের ১০০ (একশত) একরসহ ৭টি বালুমহাল ঘোষণা দিয়ে ১৪৩২ বাংলা ১৩ই চৈত্র ইজারা প্রদান করেছেন।
বরিশাল কািশপুর গনপাড়া এলাকার আর বি এন্টারপ্রাইজের প্রাে: মো: আবুল বাছেদ সর্বোচ্চ ১৬ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দরদাতা হিসেবে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসক।
কিন্তু হিজলা উপজেলাধীন মেঘনা নদীর ৩৫ নং সৈয়দ খালী সাওড়া মৌজার ৩৮৭৮-৩৮৮১ দাগের ১০০ (একশত) একর এলাকা নিয়ে হাইকোর্টে দীর্ঘদিন যাবৎ একাধিক রিট মামলা চলমান। মামলার এখনো কোনো সমাধান হয়নি। যে কারণে তৎকালীন জেলা প্রশাসকরাও ইজারা দেননি এই এলাকার বালু মহাল।
ঠিকাদার আবুল বাছেদর মুঠোফোনে বুধবার ৩টা ১১ মিনিটে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনী।
এ বিষয়ে নবাগত জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন “আমি বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড গত ১০ ও ১১ মে অভিযানে ৫৩টি ড্রেজার, ৩৬টি বাল্কহেড, ১ কোটি ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ ছয়জনকে আটক করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মো: রফিকুল আলম বলেন, জরিপ না করে বালুমহাল ঘোষণা দেওয়া বড় ধরনের অন্যায়। জরিপ ছাড়া বালুমহাল ইজারা দিলে একদিকে সরকারি আইন অমান্য করা হয়, অন্যদিকে পরিবেশ ও জলাশয় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ইজারাকৃত এলাকার আশপাশ নদীতে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু এটি বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে কিন্তু সেদিকে প্রশাসন নজর দিচ্ছেনা তাহলে তো হাইকোর্টে কেও তারা অবমাননা করছে। এটা বড় ধরনের অন্যায় ।
সচেতন মহল বলছে, আইন লঙ্ঘন ও হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় সংশ্লিষ্ট দুই সাবেক প্রশাসককে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।






