শাহিন সুমন :
শীতের সকালের মৃদু আলোয় বরিশাল নগরীর হাসপাতাল রোড দিয়ে হেঁটে গেলে শহরটা যেন তার পুরোনো দিনের গল্প বলার চেষ্টা করে। রিকশার ঘণ্টা, চায়ের দোকানের ধোঁয়া আর ব্যস্ত মানুষের চলাফেরার মধ্যে হঠাৎ করেই রাজনৈতিক আলোচনা ঢুকে পড়ে। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে একটি নাম মজিবর রহমান সরোয়ার।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাঁকে ঘিরে এখন আগের চেয়েও বেশি কৌতূহল দেখা গেছে। একদিকে অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে জনপ্রিয়তা; আবার আছে মানুষের প্রত্যাশা সবকিছু মিলিয়ে সরোয়ারকে ঘিরে শহরে তৈরি হয়েছে বিশেষ এক আলোড়ন।
শহরের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়েও বেশি কিছু অবস্থান করে। সরোয়ারকে যারা কাছ থেকে চেনেন, তারা বলেন “রাজনীতি নয়, মানুষই তাঁর সবচেয়ে বড় পুঁজি। মেয়র থাকাকালে দিনে-রাতে নগরীর রাস্তায় তাঁকে দেখা যেত নাগরীক সমস্যায় কোথাও পাইপলাইন ভেঙেছে, কোথাও ড্রেন আটকে গেছে কিংবা কোথাও খাল দখল নিয়ে জনরোষ, কোথাও জলাবদ্ধতাসহ যে কোন পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি ঘটনাস্থলে যেতেন। বরিশালের দৈনন্দিন সমস্যায় তাঁর উপস্থিতি অনেকের কাছে এখনও স্মরণীয়।
সংসদ সদস্য থাকাকালীন তিনি সদর উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে ঘুরে নানা সমস্যার কথা শুনেছেন, তার সমাধানও তিনি করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা উন্নয়ন মূলক কাজে সদর উপজেলার মানুষ তাকে স্বরন করে আজও। এই সম্পর্কই তাঁকে অন্য প্রার্থীর চেয়ে আলাদা করে।
এক প্রবীণ ভোটার আবদুল জব্বার বললেন, “শহরে সমস্যা অনেক। কিন্তু যাকে চিনি, তার কাজে বিশ্বাস করতে সুবিধা হয়। সরোয়ার সেই চেনা মানুষ। বিগত বছর গুলোতে যা এই এলাকায় হওয়ার কথা ছিল তা হয়নী। বড় বড় কাজের কথা বলেছে শুধু কিন্তু হয়নি। আশা করি আগামিতে যে নির্বাচিত হবে তার মাধ্যমে আমাদের কাজ গুলো করে দেবে।
একজন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী বললেন, “আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু নেতৃত্ব এমন হতে হবে যার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা আছে। মজিবর রহমান সরওয়ার সেদিক থেকে আলাদা। তার দক্ষতা অনেক বেশী। যার কারেন শিক্ষা সহ উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো সে বেশী করতে পারবে। যাতে করে এই অঞ্চলের সমস্যাগুলো দূর হবে। মজিবর রহমান সরওয়ার কে ওয়ার্ডের দোকানদার, রিকশাচালক, ছোট ব্যবসায়ী প্রায় সবাই তাকে চেনেন। আর চেনা পরিচয় ভোটের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।
তাঁর জনপ্রিয়তা কীভাবে গড়ে উঠেছে?
দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বরিশালের রাজনীতিতে সক্রিয় মজিবর রহমান সরওয়ার।
সংসদ সদস্য, মেয়র এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্বে সব মিলিয়ে তাঁর রাজনৈতিক পথচলা তাঁকে গভীর প্রভাবশালী করেছে।
সংগঠনী শক্তির কেন্দ্রবিন্দু
বরিশাল নগর বিএনপিতে তিনি বহু বছর ধরে অন্যতম প্রধান মুখ। তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা এবং মাঠে উপস্থিতি দলকে গতিশীল করেছে যা জনপ্রিয়তার আরেক স্তম্ভ।
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক
বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের দিনগুলোতে তিনি বরিশালে থেকে দলীয় কর্মীদের পাশে ছিলেন। এ সম্পর্ক জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। ভোটের যাত্রার ভেতর দিয়ে দেখা যায় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। এই জনপ্রিয়তা তার কাজে আসবে আগামী নির্বাচনে।
শহরের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার মধ্য দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা অন্যরকম
কখনো পুরোনো ব্যস্ত বাজার, কখনো নদীর ঘাট, আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চায়ের স্টল সবখানেই দুটি বিষয় স্পষ্ট: মজিবর রহমান সরওয়ারকে ঘিরে আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু মানুষ এবার প্রত্যাশা তথ্যভিত্তিক, বাস্তবসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা।
এক তরুণ নারী ভোটার বলেন, “জনপ্রিয়তা ঠিক আছে, কিন্তু নগরীর সমস্যা অনেক জটিল। খাল, সড়ক, ড্রেনেজ—এসবের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ দরকার।
বরিশাল-৫ সদর আসন রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ আসনে বিএনপির পুরোনো ভোটব্যাংক আছে, আবার এ নির্বাচনে জামায়াত সহ অন্য দলেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। তাই সরোয়ারের জনপ্রিয়তা তাঁকে এগিয়ে রাখলেও ফলাফল নির্ভর করবে দলের নেতা কর্মিদের কর্মযজ্ঞের উপর। তারা কতটা দলের হয়ে কাজ করবে। কারন গ্রুপিং রাজনীতি এখনও বন্ধ হয়নী বরিশাল মহানগর বিএনপিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “মজিবর রহমান সরওয়ার মাঠে উপস্থিত, দল গোছাতে জানেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন এগুলো তাঁকে প্রভাবশালী করে। কিন্তু ঘর গোছাতে না পারলে এ সবের ব্যার্থ চেষ্টা করা হবে।
নগরীর চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ব্যস্ত সড়ক
যেখানেই কথাবার্তা শোনা যায়, সেখানে সরোয়ারকে কেন্দ্র করে আলোচনা স্পষ্ট। মানুষ তাঁকে চেনে, তাঁর কাজ তারা মনে রাখে, এবং তাঁর কাছ থেকে আরও বড় কিছু প্রত্যাশা করে।
এ শহর এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোনো এক নেতাকে নতুন চোখে দেখছে।
তাঁর জনপ্রিয়তা বাস্তবে কতটা ভোটে পরিণত হবে সেটা নির্ধারণ করবে বরিশালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।





