খবর ডেস্ক :
বরিশাল নগরীর বহুতল একটি ভবনের ওপর হেলে পড়েছে আরেকটি ভবন। স্থানীয়দের দাবি- তিনদিন আগে ভূমিকম্পের কারণে চারতলা ভবনটি হেলে পড়েছে। যা রবিবার সকালে নজরে আসে।
নগরীর বেলতলা এলাকায় মাহামুদিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ভবনে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ভবন হেলে পড়ার বিষয়ে দুই ভবনের মালিক একে অপরকে দায়ী করছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের আর্কিটেক (স্থপতি) সাইদুর রহমান লুসান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ বছর পূর্বে বেলতলা মাহমুদিয়া মাদ্রাসার পাশে বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে চারতলা ভবনের অনুমতি নিয়ে সাড়ে ৪ তলা ভবন নির্মাণ করেন স্থানীয় আব্দুল মোতালেব হাওলাদার। একই স্থানে গত এক বছর পূর্বে প্লান অনুযায়ী চারতলা ভবন করেন জাহির হাওলাদার নামের আরেকজন। দুটি ভবনেই মালিক এবং ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন।
প্রতিবেশী মো. দুলাল বলেন, ‘‘সকালে রাস্তায় বের হওয়ার পর হঠাৎ করেই চোখ যায় পাশাপাশি দুটি ভবনের দিকে। দেখতে পাই একটি ভবন আরেকটির ওপর হেলে পড়ে আছে। এরপর আস্তে আস্তে এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়।’’
প্রতিবেশী হারিছুর রহমান স্বপন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবন দুটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একসময় সেখানে ডোবা ছিল। মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলত। রবিবার সকালে হঠাৎ করেই দেখতে পাই একটি ভবন আরেকটির ওপর হেলে পড়েছে। এতে পুরোনো ভবনের স্যানিটারির পাইপ ফেটে এক দেয়ালের সঙ্গে আরেক দেয়াল মিশে গেছে।
তারা অভিযোগ করেন, ভবন নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। দুই ভবনের মাঝে আড়াই ফুট জায়গা রাখার বিধান থাকলেও এ দুটি ভবনের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। মজবুতভাবে নির্মাণ না হওয়ায় ভবন হেলে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চারতলা নতুন ভবনের মালিক জহির হাওলাদারের ছেলে মো. ফাকের হাওলাদার বলেন, ‘‘আমাদের ভবন নির্মাণ হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশের ভবনটি ১৪ বছর আগে নির্মাণ করা। ওই ভবনটিই আমাদের ভবনের ওপর হেলে পড়েছে।’’ এটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে ‘হাওলাদার ভিলা’র মালিক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘‘সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি আমার ভবনের ওপর নতুন নির্মাণ করা চারতলা ভবনটি হেলে পড়েছে। হতে পারে গত ২২ নভেম্বর সকালে ভূমিকম্পের সময় ভবনটি হেলে পড়েছে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে তারা এসে ব্যবস্থা নেবেন।’’
ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা এবং প্ল্যান বহিঃর্ভূতভাবে সাড়ে চারতলা ভবন নির্মাণের বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি আব্দুল মোতালেব।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) স্থপতি সাইদুর রহমান লুসান বলেন, ‘‘একটি ভবন আরেকটির ওপর হেলে পড়ার খবরটি রবিবার সকালেই সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ শাখা কাজ করছে। এরই মধ্যে তারা তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলেছে। নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা হবে।’’ তবে মানুষ সচেতন না হলে কোনোভাবেই ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয় বলেন এই কর্মকর্তা।
সূত্র : দেশকাল




