দুবাইয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সিআইডি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী মামলা করেছে। মামলাটি কোতয়ালী থানা, সিএমপি, চট্টগ্রামে দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক মন্ত্রী ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন এলাকায় ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এসব স্থাপনা ক্রয়ের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এছাড়া তার স্ত্রী দুবাইয়ের আল বারশা সাউথ থার্ড এলাকায় দুটি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, যার মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।
অভিযান ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকে মোট চারটি হিসাব ব্যবহার করেছেন। এসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় দিরহাম ও মার্কিন ডলারে লেনদেন হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা।
পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করে সাবেক মন্ত্রী এবং তার স্ত্রী রাস আল খাইমাহ ইকোনোমিক জোন-এই দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিল্ডিং ও কন্সট্রাকশন ম্যাটারিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য ‘জেবা ট্রেডিন এফজেডই’ এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য ‘র্যাপিড র্যাপড র্যাপ্টর এফজেডই’। এসব বিনিয়োগের জন্য সরকারের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিচয়ও যথেষ্ট প্রভাবশালী। তিনি ২০১৪ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমীলা জামান এবং অজ্ঞাত ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভিযোগের সব তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত সদস্যদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তার।
সিআইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করা হয়েছে। এটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং দেশের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এটি একটি গুরুতর মামলা।