TT Ads

বরিশালের খবর ডেস্ক :

গত কয়েকদিন টানা ভারি বর্ষণের পর গত রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমায় সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সিলেটের সবকটি নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে নদীর পানি কমলেও কমেনি বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। এখনো সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় সোয়া ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ভোগান্তিতে রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো সিলেট নগরের সুরমা তীরবর্তী এলাকার অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা ও বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত হলে সিলেটের সুরমা, লোভা, সারি, গোয়াইন, পিয়াইন, ধলাই ও সারিগোয়াইন নদীতে ঢল নামে। অনেক সময় টানা ভারি বৃষ্টিপাত হলে ঢলের তোড়ে উত্তর সিলেটের সীমান্তবর্র্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সুরমার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে ঢুকে পড়ে সিলেট নগরেও। আর ভারতের আসামে ভারি বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়তে থাকে কুশিয়ারায়। কুশিয়ারার পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমায়।

গত কয়েকদিন ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এতে সিলেট নগরসহ পুরো জেলাজুড়ে বন্যা দেখা দেয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমলেও এখনো জেলার প্রধান নদীগুলোর প্রায় সবকটিই বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার বন্যা আক্রান্ত উঁচু অঞ্চলের দিকে পানি কিছুটা কমলেও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলা মিলে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত ওসমানীনগর উপজেলায়। ওই উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার জন। এর পরেই গোয়াইনঘাটে বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮শ’। এ ছাড়াও সিলেট নগরে ৫০ হাজার জন, সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৬৫ জন, বিশ্বনাথে ৪৩ হাজার ৫৬৮ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৭ হাজার ১৩৫ জন, দক্ষিণ সুরমায় ২৭ হাজার ৪৫০ জন, বালাগঞ্জে ৬ হাজার ২৯ জন, কোম্পানীগঞ্জে ৯৫ হাজার ৫শ’ জন, জৈন্তাপুরে ৯০ হাজার ১৬০ জন, কানাইঘাটে ৪১ হাজার ১শ’ জন, জকিগঞ্জে ৭৫ হাজার ৪০৯ জন, বিয়ানীবাজারে ২৪ হাজার ৮৫০ জন ও গোলাপগঞ্জে ১৯ হাজার ৫৯০ জন পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য সিলেট নগরে ৮০টি ও জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াই হাজার এবং উপজেলাগুলোতে ১৭ হাজার ৪৪৯ জন বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা আক্রান্ত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামী তিনদিন ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই পূর্বাভাস সত্যি হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আজ থেকে আগামী ৩ দিন সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা বলা হলেও গত রাত থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত অনেকটা কমেছে। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হলেও টানা ভারি বর্ষণ হয়নি।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, সিলেট নগরীর বরইকান্দিস্থ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছিল। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে ওই এলাকায় প্রবেশ করায় উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে পড়ে। তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপকেন্দ্রটি বন্যামুক্ত রাখতে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি বন্যামুক্ত রয়েছে।

সুরমার পানিতে নগর একাকার:
অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি ছড়া-খাল দিয়ে ও তীর উপচে সিলেট নগরে প্রবেশ করেছে। নগরের পানি সারাবছর ছড়া ও খাল দিয়ে সুরমা নদীতে পতিত হলেও এখন ঘটছে উল্টো। সুরমার পানি প্রবেশ করে নগরের উপশহর, সাদাটিকর, তেররতন, সাদারপাড়া, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, মাছিমপুর, কাস্টঘর, ছড়ারপাড়, চালিবন্দর, কালিঘাট, কামালগড়, তালতলা, তেলিহাওর, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, শেখঘাট, কাজিরবাজার, দাঁড়িয়াপাড়া, বরইকান্দি, ভার্থখলা, বঙ্গবীররোড, মিরাবাজার, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, কুশিঘাট, কানিশাইল, বনকলাপাড়া, কাজলশাহ, শামীমাবাদসহ শতাধিক এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার লোকজন বাসা-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ওঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। নগরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।

নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে:
গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমলেও সিলেটের প্রায় সবকটি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারার পানি আমলসীদে ৮৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৪২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *