নিজস্ব প্রতিবেদক :
শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ নতুন অভিযাত্রায় মাত্র ২০ যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো বরিশাল পৌঁছেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্টিমারটি নগরীর ত্রিশ গোডাউন জেটিতে ভিড়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জসীম উদ্দীন জানান, সকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে ৪১ যাত্রী নিয়ে স্টিমারটি যাত্রা শুরু করলেও চাঁদপুরে নেমে গেলে যাত্রী সংখ্যা কমে ২০–এ দাঁড়ায়। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা করবে।
ঘাটে পৌঁছালে যাত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আহসান হাবীব ও জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন।
প্রথম যাত্রার যাত্রী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটা শুধু যাত্রা নয়, অনুভূতি। স্টিমারের সঙ্গে আমাদের শিকড়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নদীপ্রেমীদের জন্য এ অভিজ্ঞতা অনন্য।”
তিনি পর্যটন বিকাশে বরিশালের ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান ও খাবারের ব্র্যান্ডিং করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আহসান হাবীব বলেন, “পদ্মা সেতুর পর নৌপথের জনপ্রিয়তা কমলেও ‘পিএস মাহসুদ’ আবার নদীপথে ভ্রমণের রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনবে। পর্যটনশিল্পেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন অফিসার মো. হানিফ জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা স্টিমারটিকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আগের তুলনায় গতি ও সুবিধা—দুটোই বেড়েছে। এখন ঘণ্টায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে।
নতুন সূচনা ও নিয়মিত সময়সূচি
কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি শুক্রবার স্টিমারটি ঢাকা থেকে বরিশাল এবং শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকায় চলাচল করবে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন স্টিমারটি নৌবিহারের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে।
প্রথম শ্রেণির দ্বৈত শয্যা: ২,২৬০ টাকা (ভ্যাট ৩৩০ টাকা); দ্বিতীয় শ্রেণি: ১,৬৫০ টাকা, সুলভ শ্রেণি: ৬০০ টাকা
শতবর্ষী ‘পিএস মাহসুদ’: সময়ের সাক্ষী
১৯২৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত এ স্টিমারটি ব্রিটিশ আমল থেকে দেশভাগ, পাকিস্তান-পিরিয়ড ও স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী।
১৯৮৩ সালে স্টিম ইঞ্জিন বদলে ডিজেল ইঞ্জিন বসানো হয় এবং ২০২২ সালে চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নবায়ন করা হয়।
অতীতের গৌরব, নদীর সৌন্দর্য আর ভ্রমণরসিকদের আগ্রহ নিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল ‘পিএস মাহসুদ’।



