নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাদরাসাছাত্রকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে চুরি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। প্লায়ার্স দিয়ে ওই মাদরাসাছাত্রের আঙুলের নখ তুলে ফেলার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা লামিয়া বেগম।
এসময় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান।
চুরির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিব হাওলাদার বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনি জেলা প্রশাসকের বাসভবনে কর্মরত।
নির্যাতনের শিকার শিশু আব্দুর রহিম (১৫)। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শরিফের ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে লামিয়া বেগম বলেন, ‘আমার শিশুসন্তান আব্দুর রহিম হরিনাফুলিয়া ডা. লতিফা আরিফ ইসলামিয়া মাদরাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের হাফেজি বিভাগের ছাত্র। মাদরাসা বন্ধ থাকায় গত ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরের শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনে ফুফুর বাসায় বেড়াতে যায় সে। ওইদিন রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী হাসিব হাওলাদার ও তার দুলাভাই দ্বীন ইসলামসহ ৮-১০ জন মিলে আব্দুর রহিমকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, সেখানে নিয়ে অমানবিকভাবে রহিমকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এসময় তারা প্লায়ার্স দিয়ে আব্দুর রহিমের আঙুলের নখ তুলে ফেলার চেষ্টা করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে জখম করে। বিষয়টি শোনার পরে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তখন আমাকেও নির্যাতন করে। এমনকি আমাকে আমার নিজের ঘরে অবরুদ্ধ রেখে ঘর-দরজা ভাঙচুর করে।
তিনি আরও বলেন, তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় পুলিশ এসে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমার ছেলেকেই থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরির প্রভাব খাটিয়ে হাসিব হাওলাদার বাদী হয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেন। আর সেই মামলায় আমার নির্দেশ ছেলেকে শিশু আদালতের মাধ্যমে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
লামিয়া বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি আব্দুর রহিমের জামিন হয়। এ ঘটনার পর থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন হাসিব হাওলাদার এবং এলাকায় ঢুকতেও দিচ্ছেন না। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মামলার বাদী বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হাসিব হাওলাদার। তিনি বলেন, স্বর্ণালংকারসহ আমার বাসা থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। আব্দুর রহিম নিজেই চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাছাড়া চুরির সময় তাকে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে সাক্ষীরা।
তবে শিশুটিকে পুলিশে না দিয়ে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান হাসিব এবং দেখা করার প্রস্তাব দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে শিশু আব্দুর রহিমকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাকে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তবে শিশুটির কাছে চুরির কোনো আলামত বা চোরাই মালামাল পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বাদী মামলা দিতে এলে তাকে তো ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আর মামলা নেওয়ার আগে তদন্তের প্রয়োজন নেই। বাদী মামলা দিয়েছে পুলিশ আসামি ধরে জেলে পাঠিয়েছে। এখন সে অপরাধী কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
তবে শিশু ও তার মাকে নির্যাতন এবং তাদের ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ৯৯৯-এ কল করে আইনি সহায়তা চেয়েও পুলিশ কেন তাদের সহায়তা করলো না সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি।