TT Ads

বরিশালের খবর ডেস্ক :
৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর মাছ ধরতে সাগরে নেমে মাত্র দ্বিতীয় দিনেই জেলেদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জাল ফেলে কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশ নিয়ে ফিরছেন তারা।

সেই মাছেই এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাটজুড়ে ছিল ইলিশ আর নানা সামুদ্রিক মাছের সরব উপস্থিতি, সেই সঙ্গে জেলে, শ্রমিক, আড়তদারদের ব্যস্ততা আর বাজারের গরম বাতাস।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে দ্বিতীয় দিনে ২০ হাজার ৮১৭ কেজি মাছ, যার মধ্যে ৯ হাজার ৩০৫ কেজিই ইলিশ। বাকি ১১ হাজার ৫১২ কেজি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। মাছের ঢল দেখেই বোঝা যায়, এ বছর বঙ্গোপসাগরের মাছের ভাণ্ডার আবারও সমৃদ্ধ হয়েছে।

তবে ইলিশের বাজারমূল্য এবার যেন আকাশ ছুঁয়েছে। ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ লাখ টাকায়, ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৮৯ থেকে ৯০ হাজার টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ৬০ থেকে ৬৪ হাজার টাকা, আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৬ হাজার টাকায়। এত বেশি দামে ইলিশ বিক্রির চিত্র বহু বছরের পুরোনো।

বড় সাইজের ইলিশ থাকায় আড়তগুলোতে ক্রেতা ও পাইকারদের আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু জেলেদের মুখে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। সমুদ্রে মাছ পাওয়া গেলেও বেড়েছে খরচ। বরফ, ডিজেল এবং শ্রমিক সংকট জেলেদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, লাভ তো হচ্ছে না, খরচ মেটানোই দায় হয়ে পড়ছে। বরফের সংকটে মাছের গুণগত মান ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

অবরোধ শেষে মাছের সরবরাহ বেড়েছে, তবে মাছকে ঘাট থেকে বাজার পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দিতে পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক মাছ। এতে বাজারে দাম পড়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার জানান, একদিনের মাছের পরিমাণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সাগরে মাছের প্রাচুর্য ফিরে এসেছে। তবে এখন জরুরি হয়ে উঠেছে উপযুক্ত সংরক্ষণ, দ্রুত বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তা না হলে উৎপাদিত মাছের একটি বড় অংশই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মহসীন জানিয়েছেন, চলতি বছর ভারতের সঙ্গে সমন্বয়ে সফলভাবে মৎস্য সংরক্ষণ অভিযানে নিষেধাজ্ঞা পালন করা হয়েছে। তারই ফলাফল এখন দৃশ্যমান সাগরে মাছের উপস্থিতি বেড়েছে, বিশেষ করে ইলিশ।

তবে এই সফলতা টিকিয়ে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। জেলেদের জন্য সহজ শর্তে বরফ, জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে ভোক্তার জন্য সুলভ দামে ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বঙ্গোপসাগরে এখন চলছে ইলিশের মৌসুম। এই রূপালি সোনার প্রাচুর্যে খুশি জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে বরফ, জ্বালানি সংকট এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় এই সোনা যেন শেষ পর্যন্ত শুধুই কিছু হাতে গোনা ব্যবসায়ীর ঘরে আটকে না পড়ে এমনটাই প্রত্যাশা দেশের সাধারণ মানুষের।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *