নিজস্ব প্রতিবেদক :
কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকায় ভুরিভোজ করা বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম মনজুর-এ-এলাহীর বিরুদ্ধে এখনো হয়নি তদন্ত কমিটি গঠন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধত্বন কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে মাথাব্যাথা নেই বললেই চলে।
গত বৃহস্পতিবার সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম মনজুর-এ-এলাহীর পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ভূরিভোজ এবং সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়।
জানাযায় সিভিল সার্জনকে খুশি করতে হাসপাতালের ২২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে তোলা হয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে চাঁদা তোলার বিষয়ে কথোপকথন শোনা যায়। এর পাশাপাশি ফ্রিজে মাছ রাখার একটি ভিডিও দেখা যায়।
এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এবিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানালেও হঠাৎ সুর পাল্টিয়েছেন স্বাস্থের বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। ঘটনার বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও কোন তদন্ত না করে বলছেন ভিন্ন কথা।
এবিষয়ে রোববার (২৭ জুলাই) তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থের বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, এবিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি হয়নি। আমি সিভিল সার্জনকে জিজ্ঞেস করেছি তিনি বলেছেন এধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। যদি এধরনের কিছু থাকে তাহলে যে সাস্তি হয় আমি মাথা পেতে নেব। এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে৷
জানা গেছে, গত বুধবার (২৩ জুলাই) বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-এলাহী। এ সময় তিনি হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পাশাপাশি বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকের সঙ্গেও বৈঠক করেন। দুপুরে ভূরিভোজ শেষে তিনি বিকালে বরিশালের উদ্দেশে বাকেরগঞ্জ ছাড়েন।
তবে জেলা সিভিল সার্জনের পরিদর্শন উপলক্ষে আগেই হাসপাতালের অভ্যন্তরে শুরু হয় ব্যাপক প্রস্তুতি, যার অংশ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার হাসপাতালের সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও স্টাফের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন।
এর মাধ্যমে ভালো মানের লাঞ্চ সরবরাহ এবং সিভিল সার্জনকে আকর্ষণীয় উপহার দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনকে আপ্যায়নের অজুহাতে হাসপাতালের ২২৮ জন স্টাফের মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এর মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা । এসব অর্থে আয়োজন করা হয় দুপুরের খাবার। এছাড়া সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার জন্য কেনা হয় বড় সাইজের আটটি ইলিশ এবং ছয়টি আইড় মাছ, যা রাখা হয় হাসপাতালের ওষুধের জন্য বরাদ্দ ডিপ ফ্রিজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল একাধিক কর্মী জানান, ভূরিভোজ ও সিভিল সার্জনকে উপহার দেওয়ার কথা বলে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে অর্থ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার বলেন, টাকা কালেকশন করার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।