নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আমীরুল মুজাহিদীন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই-এর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে চরমোনাইয়ের তিন দিনব্যাপী অগ্রহায়ণের মাহফিল। বুধবার (২৬ নভেম্বর) জোহরের নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে মাহফিলের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট দায়িত্ব—বান্দেগি, ন্যায় ও সত্যের পথে চলার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। দুনিয়া হচ্ছে সেই পরীক্ষা কেন্দ্র। এই পরীক্ষায় সফলতাই মানুষের প্রকৃত পরমানন্দ।”
তিনি জানান, চরমোনাই মাহফিলের উদ্দেশ্য কোনো দুনিয়াবি লক্ষ্য নয়; বরং মানুষকে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী করা, দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং আত্মশুদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনা।
তিনি আরও বলেন, “দুনিয়ার মোহই সকল অন্যায়ের মূল কারণ। তাই যে কেউ যদি দুনিয়াবি উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেন, তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আখেরাতমুখী আমল করার প্রস্তুতি নিন। আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকুন, অহংকার ও আমিত্ব দূর করে দিন।”
পীর সাহেব চরমোনাই আরও জোর দিয়ে বলেন,
“ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় জীবনও ইসলামের আলোকে পরিচালিত হলে সত্যিকার মুক্তি আসবে।”
চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ পাশের আরও একটি মাঠ মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বৃহৎ মাহফিল। দুই মাঠেই রয়েছে কঠোর শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম দায়িত্ব পালন করছে। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও সামগ্রী খুঁজে পেতে প্রতিটি মাঠেই রয়েছে হারানো ক্যাম্প।
মাহফিলে আগত মুসল্লীদের চিকিৎসাসেবার জন্য ১০০ শয্যার স্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৪০ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন। মাঠে রয়েছে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। অসুস্থ হলে মাঠ থেকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক দল।
সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লীদের জন্য রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, ওজু ও গোসলের পৃথক ব্যবস্থা, খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনের স্থান, হালকা ও প্রশিক্ষণ।
আজ সকাল ৮টা থেকে হাজারো মুসল্লীকে বিভিন্ন হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত শিক্ষা এবং ইসলামের মৌলিক বিধান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিন দিনই এই কার্যক্রম চলবে।
মাহফিলের প্রথমদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি সম্মেলন।
দ্বিতীয় দিন হবে ওলামা সম্মেলন।
শেষদিন সকালে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্র গণজমায়েত।
এ ছাড়া ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের উদ্যোগে যুবক ও শ্রমিকদের নিয়ে আলাদা মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৯ নভেম্বর শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে পীর সাহেব চরমোনাই-এর আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ মাহফিলের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।
চরমোনাই মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.)।
তার ইন্তেকালের পর ১৯৭৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)।
২০০৬ সালে তার ইন্তেকালের পর থেকে বর্তমানে আমীরুল মুজাহিদীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম — পীর সাহেব চরমোনাই।



