TT Ads

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল বিভাগে কর্মরত বিচারকদের সাথে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন ‍এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকাল ১০.০০ টায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা‍য় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলাম ।

বক্তাদের আলোচনায় বিচারবিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়।

এ সময় বক্তারা বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর জন আশা-আকাঙ্ক্ষা, কাঙিক্ষত স্বপ্নপূরণ ও বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে কতিপয় কমিশন গঠন করেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ প্রতিটি কমিশন ইতোমধ্যে নিজ নিজ সংস্কার ভাবনাসহ বিস্তারিত রিপোর্ট ও সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

বক্তারা ‍আরও বলেন, প্রতিটি সভ্য রাষ্ট্রে সরকারের তিনটি প্রধান অঙ্গ- আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক অঙ্গের ভূমিকা ও কাজ আলাদা আলাদা হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। বিচার বিভাগ পৃথককরণ বিষয়টি ব্রিটিশ আমল থেকে আলোচিত ইস্যু হলেও পাকিস্তান ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশেও তা কার্যকর করার জন্য তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অতি সম্প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো প্রাপ্তির পর তা পর্যালোচনাপূর্বক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারের লক্ষ্যে যেসব সংস্কার প্রস্তাব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার তালিকা করেছেন তার মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিচার বিভাগ নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। বিগত সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকারও দায় এড়িয়ে যাবে না মর্মে এসোসিয়েশন দৃঢ় বিশ্বাস করে। এজন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ বলে বিচারকগণ মনে করেন।

বক্তারা বলেন, বিগত দিনে বিচার বিভাগকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে দেখা গেছে, যা অনভিপ্রেত এবং মোটেই কাম্য নয়। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম এবং প্রধান অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। নির্বাহী বলয় থেকে বের হতে না পারলে সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষা করা সুদূর পরাহত। সেক্ষেত্রে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নাই। এজন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি। জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও বাজেট সংক্রান্ত বিষয়গুলো একান্তই আলাদা সচিবালয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা গেলে বিচার বিভাগের পৃথককরণ সফলতার মুখ দেখবে উপস্থিত সকলে আশা প্রকাশ করেন। এতে করে জনগণের ক্ষমতায়ন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি অনেকটা সহজতর হবে।

বক্তারা ‍আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি বিচার বিভাগের যথাযথ অবস্থান সমুন্নত করতে না পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতেও হীন স্বার্থে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্যান্য বিভাগের পাশাপাশি বিচার বিভাগ সংস্কারও অত্যাধিক গুরুত্ব বহন করে। তাই স্বাধীন ও নির্বাহী হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এসোসিয়েশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানায়।

‍এদিকে সভায় বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন ‍এর কাছে বিভিন্ন দাবিতে স্বারকলিপি দেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী ‍এসোসিয়েশন। সভায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জেলা ও দায়রা জজ ‍আদালতের বিচারক সহ বিভিন্ন ‍আদালতের বিচারক ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন ‍এর নেতারা ‍উপস্থিত ছিলেন।

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *